Politics

ভিতিকর অবস্থায় আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন ইরানকে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা এবং বৈশ্বিক জ্বালানি প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রবিবার চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা ইরানকে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা থেকে বিরত রাখে। এই প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অপরিশোধিত জ্বালানি পরিবহনের রুট।

“আমি বেইজিংয়ে চীনা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন ইরানকে এই বিষয়ে ফোন করে কথা বলে, কারণ চীন নিজের জ্বালানি চাহিদার জন্য হরমুজ প্রণালীর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল,” বলেন রুবিও ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। চীন ইরানের প্রধানতম তেল ক্রেতা এবং ইসলামিক রিপাবলিকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে।

এর আগে রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র “তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব ধরনের বিকল্প সংরক্ষণ করে,” যুক্তরাষ্ট্র যখন সপ্তাহান্তে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে বলে একজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য উল্লেখ করেছেন। তবে প্রণালী বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে।

ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত এই সরু জলপথ বন্ধ করার চেষ্টা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৪ সালে এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়েছে, যা বৈশ্বিক তেল ব্যবহারের ২০ শতাংশ, বলছে ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

গোল্ডম্যান স্যাকস ও র‍্যাপিডান এনার্জি নামক পরামর্শদাতা সংস্থার মতে, যদি হরমুজ প্রণালী দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ থাকে, তাহলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের ওপরে চলে যেতে পারে। তবে জেপি মর্গ্যানের বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই প্রণালী বন্ধ করার সম্ভাবনা কম, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে দেখবে।

রুবিও বলেন, ইরানের জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা হবে “অর্থনৈতিক আত্মহত্যা”, কারণ ইসলামিক রিপাবলিকের তেল রপ্তানি এই জলপথ দিয়েই হয়।

ইরান ওপেকের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ, যারা প্রতিদিন ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। গত মাসে দেশটি ১.৮৪ মিলিয়ন ব্যারেল রপ্তানি করেছে, যার বেশিরভাগই চীনে গেছে। Kpler-এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের পানিপথে আসা তেলের প্রায় অর্ধেকই আসে পারস্য উপসাগর থেকে।

“এটা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারা: প্রণালী বন্ধ হলে তাদের তেলের রপ্তানি চীনে পৌঁছাতে পারবে না, যা তাদের আয়ের প্রধান উৎস,” বলেন Kpler-এর প্রধান তেল বিশ্লেষক ম্যাট স্মিথ।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যদি ইরান প্রণালী বন্ধের চেষ্টা করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের এর মোকাবিলার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।

“এটা অন্য দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর আমাদের তুলনায় অনেক বেশি আঘাত হানবে,” বলেন রুবিও ফক্স নিউজে। “এটা হবে এক বিশাল উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা, যার জবাব শুধু আমাদের পক্ষ থেকে নয়, বরং অন্যদের দিক থেকেও আসবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর বাহরাইনে অবস্থান করছে এবং পারস্য উপসাগরের সমুদ্রপথে বাণিজ্য রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। তেলবাজারে অনেকেই বিশ্বাস করেন, যদি ইরান প্রণালী বন্ধের চেষ্টা করে, তবে মার্কিন নৌবাহিনী দ্রুতই তা প্রতিহত করতে পারবে। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, বাজার এই ঝুঁকিকে হালকাভাবে দেখছে।

“আমাদের মতে, ইরান চাইলে হরমুজ দিয়ে শিপিং দীর্ঘ সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত করতে পারে—যেটা বাজার এখনো বুঝে উঠতে পারেনি,” বলেন র‍্যাপিডান এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের জ্বালানি উপদেষ্টা বব ম্যাকন্যালি।

তাঁর মতে, শিপিং কার্যক্রম কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী বন্ধ থাকতে পারে, যেখানে বাজার ভাবছে এটি কয়েক ঘণ্টা বা দিনে শেষ হয়ে যাবে।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফল হবে ঠিকই, তবে “তা কোনো সহজ লড়াই হবে না,” বলেন ম্যাকন্যালি।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *